প্রতিষ্ঠানের নামঃ চুনতী হাকিমিয়া কামিল (এম.এ) মাদ্‌রাসা৷

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ বাংলাদেশের প্রাচীনতম দ্বীনি শিক্ষা নিকেতন দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম চুনতীতে প্রতিষ্ঠিত অত্র চুনতী হাকিমিয়া কামিল (এম.এ) মাদ্‌রাসা  ১৮১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়৷ তত্কালীন সময় থেকে দ্বীনি শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষা বিস্তারে এ প্রতিষ্ঠান অনন্য ভূমিকা রেখে আসছে৷ ১৯৯৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বর্ণপদক  প্রাপ্ত হয়৷ বর্তমানে স্বনামধন্য মুহাদ্দিস, ফকীহ্‌ ও যোগ্য, নিষ্টাবান শিক্ষক মন্ডলীর তত্বাবধানে মাদ্‌রসায় বহুমুখী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে৷ ১ম শ্রেণি থেকে কামিল  পর্যন্ত দুই সহস্‌্রাধিক ছাত্র অত্র মাদ্‌রসায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে উন্নত পরিবেশে অধ্যয়নের সুযোগ পাচ্ছে৷ প্রতিবছর পাবলিক পরীক্ষা সমূহের ফলাফলও সন্তোষজনক৷ মাদ্‌রাসা পরিচালনার জন্য ১৪ সদস্য বিশিষ্ট গভর্নিং বডি সরকারী অনুমোদন প্রাপ্ত৷

প্রতিষ্ঠাকালঃ ১৮১০ ইং৷  

ইতিহাসঃ

নৈসর্গিক সৌন্দর্য মন্ডিত উত্তর দক্ষিণে সুবিস্তৃত গিরিতট নিয়ে গঠিত পীর আউলিয়াদের পূন্য ভূমি চট্টগ্রাম জেলার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত এক মহিমান্নিত গ্রাম চুনতী৷ যার প্রাণ কেন্দ্র নয়াভিরাম এক পার্বত্য টিলার উপর প্রাচীনতম দ্বীনি শিক্ষ নিকেতন “উম্মুল মাদারেস” নামে খ্যাত “চুনতী হাকিমিয়া কামিল মাদ্‌রাসার সুরম্য প্রাসাদটি ইসলামের সুমহান ঐতিহ্যের প্রতীক রুপে চির ভাস্বর হয়ে রয়েছে৷ যার রয়েছে দীর্ঘ দু’শতাব্দীর অধিক গৌরােজ্জল অতীত৷ আযাদী আন্দোলনের মহান নায়ক হযরত শাহ্‌ সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী (রা:) এর অন্যতম শিষ্য গাজীয়ে বালাকোট হযরত শাহ্‌ মাওলানা আব্দুল হাকীম (রা:) ১৮১০ সালে এর গোড়াপত্তন করেন৷ তবে মাদ্‌রাসাটি তখন প্রাথমিক পর্যায়ের বোধ হয় তিনি এর কোন নামকরণ করেননি৷ ক্রমানুসারে তাঁর জৈষ্ট পুত্র মরহুম ওয়াজীহ্‌ উল্লাহ সামী ১৮৮৩ সালে ইহাকে সামিয়া মাদ্‌রাসা নামকরণ করে পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ যিনি ভারতের এলাহবাদ শহরে সমসাময়ীক কালে ছদরুচ্ছুদুর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন৷ পরবর্তীতে মাদ্‌রাসাটি ফাযিল পর্যন্ত উন্নীত হয়ে কালের আবর্তন বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে দাঁড়িয়েছিল৷ তবে যে প্রতিষ্ঠানটি জন্মলগ্ন থেকে দীর্ঘ শতাধিক বছর ধরে এতদঞ্চলে জনসাধারণকে ইসলামী শিক্ষা দিক্ষায় প্রদীপ্ত করেছিল তা কোন অবস্থায় ব্যহত হবার নয়৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর মন্দা যোগে মাদ্‌রাসাটির বিলীনোস্মুখ অবস্থা রোধ করার জন্য দৃঢ় মনোরথ ও বাস্তত কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে আসেন দ্বীনের মহান সেবক চুনতীর উজ্বল নক্ষত্র তত্কালীন দারুল উলুম মাদ্‌রাসার বরেন্য হেড মাওলানা মরহুম শাহ্‌ নজীর আহমদ (রা:) তিনি গ্রামের শিক্ষনুরাগী ও মুরব্বীদের ঐকান্তিকতা ও সহযোগীতায় মাদ্‌রাসার পুন: সংস্কারের কাজ সুচারু রূপে আঞ্জাম দিয়ে যান৷ তারই সুষ্ঠ তত্বাবধানে ১৯৩৭ ঈসায়ী সনে মাদ্‌রাসাটি পুনরায় চালু হয়৷ তিনি মরহুম মাওলানা আব্দুল হাকীম (রা:) এর স্মৃতির প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করত: এর নামকরণ করেন “হাকিমিয়া মাদ্‌রাসা” ২ বত্সরের মধ্যে এ মাদ্‌রাসাটি “বঙ্গল মাদ্‌রাসা এডুকেশন বোর্ডের অধীনে ফাযিল শ্রেনী পর্যন্ত সরকারী অনুমোদন লাভ করে৷ এলাকার সর্বস্তরের জন সাধারনের নিষ্ঠাপূর্ণ সহযোগীতায় তা ক্রমশ অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে থাকে৷ পরবর্তীতে ৭০ এর দশকের সূচনা কালে আধ্যাত্মিক জগতের সিংহ পুরুষ অলীকুল শিরমনি ১৯ দিন ব্যাপী মাহফিলে সীরতুন্নবী (সঃ) এর প্রবর্তক হযরত শাহ্‌ মাওলানা হাফেজ আহমদ (রহ:) এর ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সার্বিক পৃষ্টপোষকতায় মাদ্‌রাসায় কামিল হাদীসের ক্লাস চালু হয়৷ কিন্তু দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিস্থিততে তা স্থগিত হয়ে যায়৷ এরপর ১৯৭৬ সালে হযরত শাহ্‌ সাহেব কেবলার আদেশে কামিল হাদীস পুনরায় চালু হয়ে  ১৯৭৮ ইং সালে তা সরকারী অনুমোদন লাভ করে৷

মাদ্‌রাসার বিভিন্ন সমস্যার দরাজ হস্ত নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন যাঁরা তাঁদের মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত কেবলা নামে খ্যাত শাহ্‌ মাওলানা মীর মুহাম্মদ আখতার (রহ:)৷ পরবর্তীতে এ দায়িত্ব পালন করেন মরহুম হুজুরে কেবলা শাহ্‌ মাওলানা আব্দুল জব্বার (রহ:) বর্তমানেও এ পৃষ্টপোষকতার গুরু দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বায়তুশ শরফ দরবারের কর্ণধার বাহারুল উলুম হযরত শাহ মাওলানা কুতুবুদ্দিন সাহেব পীর সাহেব কেবলা বায়তুশ শরফ৷ যিনি অত্র মাদ্‌রাসার সমসাময়িক কালের একজন অন্যতম কৃতি ছাত্র এবং গুলজারে হাকিমির উজ্জল এক্ষত্রও বটে৷

প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজ দু’শতাব্দী অতিক্রম করা পর্যন্ত অত্র মাদ্‌রাসার সুমিষ্ট প্রস্রবরে অমীয় সুধা পানে যুগে যুগে পরিতৃপ্ত হয়েছেন শত সহস্র তৃষ্ণাতুর ছাত্র৷ আর এর গগন চুম্বী পাওয়ার হাউজ থেকে বিকিরিত আলোক রশ্মিতে প্রদীপ্ত হয়েছে অসংখ্য আলোর সন্ধানী অন্তর রাজ্য৷ বর্তমানে প্রাক্তন ছাত্রদের অনেকে দেশ বিদেশে বিভিন্ন সরকার ী বেসরকারী গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত আছেন৷

১৮১০ সাল থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত মাদ্‌রাসা পরিচালনার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত ছিলেন সঠিকভাবে তা জানা সম্ভব হয়নি৷ তবে ১৯৩৭ সাল থেকে যাঁরা বিভিন্ন সময় মাদ্‌রাসা পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাঁরা হচ্ছেন-

১৷ মাওলানা আব্দুস সোবহান (রহ:), লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম- ১৯৩৭-১৯৪২ ইংরেজী পর্যন্ত৷

২৷ মাওলানা নুরুল হোসাইন (রহ:) চুনতী, (স্বর্ণপদক প্রাপ্ত তত্কালীন বাংলা ও আসামে টাইটেল সুপারিন্টেন্ডেড) ১৯৪২-১৯৪৩

৩৷ মাওলানা সৈয়দ আহমদ আনকানী (রহ:) ১৯৪৩-১৯৪৪ ইং পর্যন্ত৷

৪৷ মাওলানা ফজলুল্লাহ্‌ (রহ:), বাবুনগর, সাতকানিয়া- ১৯৪৫-১৯৪৯ ইং পর্যন্ত৷

৫৷ মাওলানা আবু তাহের নাজের (রহ:) [১৯৩৬ সালে ফাজিল (অবিভক্ত বাংলা) পরীক্ষায় ১ম শ্রেণিতে ১ম হয়ে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত) ১৯৪৯-১৯৬৩ ইং পর্যন্ত৷

৬৷ শাহ্‌ মাওলানা হাবীব আহমদ (রহ:) পীর সাহেব কেবলা, চুনতী, ০৮/১২/১৯৭৬- ১৫/১০/১৯৮১ ইং পর্যন্ত৷

৭৷ শাহ্‌ মাওলানা শফিক আহমদ(রহ:), চুনতী, অধ্যক্ষ- ০১/০১/১৯৮২-০৪/০৯/১৯৮৬ ইং পর্যন্ত৷

৮৷ ড. মাওলানা আবু বকর রফিক, চুনতী, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম- ০১/০৯/১৯৮৬-১৪/০৪/৮৭ ইং পর্যন্ত৷

৯৷ ড. মাওলানা আ.ক.ম আব্দুল কাদের, অধ্যক্ষ- ১৫/০৪/১৯৮৭-২৮/০২/১৯৮৯ ইং পর্যন্ত৷

১০৷ মাওলানা আজিজুল হক, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ- ০১.০৩/১৯৮৯-১৪/১১/১৯৯২ ইং পর্যন্ত৷

১১৷ মাওলানা মহমুদুল হক, অধ্যক্ষ, কক্সবাজার, ১৫/১১/১৯৯২-০৬/০৪/২০০৬ ইং পর্যন্ত৷

১২৷ মাওলানা আ.ন আতীক আহমদ, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, অত্র মাদ্‌রাসা, ০৭.০৪/২০০৬-৩১/১২/২০০৬ ইং পর্যন্ত৷

১৩৷ মাওলানা ছাবের হেলালী, ছদাহা, ভারপ্রাপ্ত ০১/০১/২০০৭-৩১/১২/২০০৭ ইং পর্যন্ত৷

১৪৷ মাওলানা আ.ন. আতীক আহমদ, ভারপ্রাপ্ত  ০১/০১/২০০৮/ থেকে ২৬/১১/২০১১ ইং পর্যন্ত

১৫৷ মাওলানা হাফিজুল হক নিজামী, অধ্যক্ষ, অত্র মাদ্‌রাসা, ২৭/১১/২০১১ ইং থেকে চলমান-

বর্তমান অবস্থা:

বর্তমানে মাদ্‌রাসায় শ্রেণি সংখ্যা ১৭টি অধ্যায়নরত ছাত্র সংখ্যা ১,২২৮ জন, শিক্ষক মন্ডলী ২৭ জন এবং অন্যান্য কর্মচারী ৭ জন নিরচিচ্ছিন্নভাবে সুষ্ঠ পরিবেশে ১ম থেকে কামিল শ্রেণি পর্যন্ত আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে সম্পূর্ণ সরকারী সিলেবাস অনুসরণ করে লেখা-পড়া চলমান৷