CHUNTI HAKIMIA KAMIL MADRASAH
LOHAGARA,CHITTAGONG. EIIN : 104569
সাম্প্রতিক খবর

 চুনতী হাকিমিয়া কামিল (এম.এ) মাদ্রাসার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

নৈসর্গিক সৌন্দর্য মন্ডিত উত্তর দক্ষিণে সুবিস্তৃত গিরিতট নিয়ে গঠিত পীর আউলিয়াদের পূন্য ভূমি চট্টগ্রাম জেলার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত এক মহিমান্নিত গ্রাম চুনতী৷ যার প্রাণ কেন্দ্র নয়াভিরাম এক পার্বত্য টিলার উপর প্রাচীনতম দ্বীনি শিক্ষ নিকেতন “উম্মুল মাদারেস” নামে খ্যাত “চুনতী হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসার সুরম্য প্রাসাদটি ইসলামের সুমহান ঐতিহ্যের প্রতীক রুপে চির ভাস্বর হয়ে রয়েছে৷ যার রয়েছে দীর্ঘ দু’শতাব্দীর অধিক গৌরবোজ্জল অতীত৷ আযাদী আন্দোলনের মহান নায়ক হযরত শাহ্ সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী (রা:) এর অন্যতম শিষ্য গাজীয়ে বালাকোট হযরত শাহ্ মাওলানা আব্দুল হাকীম (রা:) ১৮১০ সালে এর গোড়াপত্তন করেন৷ তবে মাদ্রাসাটি তখন প্রাথমিক পর্যায়ের বোধ হয় তিনি এর কোন নামকরণ করেননি৷ ক্রমানুসারে তাঁর জৈষ্ট পুত্র মরহুম ওয়াজীহ্ উল্লাহ সামী ১৮৮৩ সালে ইহাকে সামিয়া মাদ্রাসা নামকরণ করে পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ যিনি ভারতের এলাহবাদ শহরে সমসাময়ীক কালে ছদরুচ্ছুদুর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন৷ পরবর্তীতে মাদ্রাসাটি ফাযিল পর্যন্ত উন্নীত হয়ে কালের আবর্তন বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে দাঁড়িয়েছিল৷ তবে যে প্রতিষ্ঠানটি জন্মলগ্ন থেকে দীর্ঘ শতাধিক বছর ধরে এতদঞ্চলে জনসাধারণকে ইসলামী শিক্ষা দিক্ষায় প্রদীপ্ত করেছিল তা কোন অবস্থায় ব্যহত হবার নয়৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর মন্দা যোগে মাদ্রাসাটির বিলীনোস্মুখ অবস্থা রোধ করার জন্য দৃঢ় মনোরথ ও বাস্তত কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে আসেন দ্বীনের মহান সেবক চুনতীর উজ্বল নক্ষত্র তত্কালীন দারুল উলুম মাদ্রাসার বরেন্য হেড মাওলানা মরহুম শাহ্ নজীর আহমদ (রা:) তিনি গ্রামের শিক্ষনুরাগী ও মুরব্বীদের ঐকান্তিকতা ও সহযোগীতায় মাদ্রাসার পুন: সংস্কারের কাজ সুচারু রূপে আঞ্জাম দিয়ে যান৷ তারই সুষ্ঠ তত্বাবধানে ১৯৩৭ ঈসায়ী সনে মাদ্রাসাটি পুনরায় চালু হয়৷ তিনি মরহুম মাওলানা আব্দুল হাকীম (রা:) এর স্মৃতির প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করত: এর নামকরণ করেন “হাকিমিয়া মাদ্রাসা” ২ বত্সরের মধ্যে এ মাদ্রাসাটি “বঙ্গল মাদ্রাসা এডুকেশন বোর্ডের অধীনে ফাযিল শ্রেনী পর্যন্ত সরকারী অনুমোদন লাভ করে৷ এলাকার সর্বস্তরের জন সাধারনের নিষ্ঠাপূর্ণ সহযোগীতায় তা ক্রমশ অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে থাকে৷ পরবর্তীতে ৭০ এর দশকের সূচনা কালে আধ্যাত্মিক জগতের সিংহ পুরুষ অলীকুল শিরমনি ১৯ দিন ব্যাপী মাহফিলে সীরতুন্নবী (সঃ) এর প্রবর্তক হযরত শাহ্ মাওলানা হাফেজ আহমদ (রহ:) এর ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সার্বিক পৃষ্টপোষকতায় মাদ্রাসায় কামিল হাদীসের ক্লাস চালু হয়৷ কিন্তু দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিস্থিততে তা স্থগিত হয়ে যায়৷ এরপর ১৯৭৬ সালে হযরত শাহ্ সাহেব কেবলার আদেশে কামিল হাদীস পুনরায় চালু হয়ে ১৯৭৮ ইং সালে তা সরকারী অনুমোদন লাভ করে৷
মাদ্রাসার বিভিন্ন সমস্যার দরাজ হস্ত নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন যাঁরা তাঁদের মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত কেবলা নামে খ্যাত শাহ্ মাওলানা মীর মুহাম্মদ আখতার (রহ:)৷ পরবর্তীতে এ দায়িত্ব পালন করেন মরহুম হুজুরে কেবলা শাহ্ মাওলানা আব্দুল জব্বার (রহ:) বর্তমানেও এ পৃষ্টপোষকতার গুরু দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বায়তুশ শরফ দরবারের কর্ণধার বাহারুল উলুম হযরত শাহ মাওলানা কুতুবুদ্দিন সাহেব পীর সাহেব কেবলা বায়তুশ শরফ৷ যিনি অত্র মাদ্রাসার সমসাময়িক কালের একজন অন্যতম কৃতি ছাত্র এবং গুলজারে হাকিমির উজ্জল এক্ষত্রও বটে৷
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজ দু’শতাব্দী অতিক্রম করা পর্যন্ত অত্র মাদ্রাসার সুমিষ্ট প্রস্রবরে অমীয় সুধা পানে যুগে যুগে পরিতৃপ্ত হয়েছেন শত সহস্র তৃষ্ণাতুর ছাত্র৷ আর এর গগন চুম্বী পাওয়ার হাউজ থেকে বিকিরিত আলোক রশ্মিতে প্রদীপ্ত হয়েছে অসংখ্য আলোর সন্ধানী অন্তর রাজ্য৷ বর্তমানে প্রাক্তন ছাত্রদের অনেকে দেশ বিদেশে বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত আছেন৷